হিসাববিজ্ঞানের ডিকশনারি পার্ট (আংশিক) হিসাববিজ্ঞানের প্রথম সিঁড়ি-২০১৮/১৯ থেকে

➽ অদৃশ্যমান লেনদেন: যেসব লেনদেন প্রত্যক্ষ দেখা যায় না বা দৃষ্টিগোচর হয় না তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমন: অবচয়, সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি, অনাদায়ী পাওনা, বাট্টা প্রভিশন।

➽ অধমর্ণ এবং উত্তমর্ণ: উত্তমর্ণ শব্দের অর্থ ঋণ দাতা/ যে ঋণ দেয়/ মহাজন। যাকে পাওনাদার বলা যায় এটি কারবারের দায়। আর উত্তমর্ণের বিপরীত শব্দ হলো অধমর্ণ। এর অর্থ ঋণ গ্রহীতা যাকে দেনাদার বলা যায়।

➽ অ-নগদ লেনদেন: যে লেনদেনের ফলে প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে অর্থের আদান-প্রদান হবে না তাকে অ-নগদ লেনদেন বলা হবে। যেমন: অবচয় ধার্য করা হলো ৯০০০ টাকা; সম্পদ বিক্রয়ের ক্ষতি ৪০০০ টাকা। Business Dictionary অনুযায়ী অনগদ লেনদেন বলতে সেসব বিনিয়োগ ও অর্থায়ন কার্যক্রমকে বুঝায় যা নগদ আন্তপ্রবাহ অথবা বহিপ্রবাহকে প্রভাবিত করে না, কিন্তু মালিকানা স্বত্ব অথবা দীর্ঘমেয়াদী দায় এবং সম্পদের সাথে জড়িত থাকে। অনগদ লেনদেনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন ও অতাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন। তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন: যে অনগদ লেনদেন নগদ প্রবাহ বিবরণীকে প্রভাবিত করে না কিন্তু আর্থিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে তাকে তাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন বা পুস্তক লেনদেন বা অর্থপূর্ণ অনগদ লেনদেন বলে। যেমন: ঋণপত্রকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর, সম্পদের বিনিময়ে সাধারণ শেয়ার ইস্যু, সম্পদের বিনিময়ে ঋণপত্র ইস্যু ইত্যাদি। অর্থপূর্ণ অনগদ লেনদেনকে পাদটীকার মাধ্যমে নগদ প্রবাহ বিবরণীতে দেখাতে হয়। অতাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন: যে অনগদ লেনদেন আর্থিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে আবার নগদ প্রবাহ বিবরণীতেও উপস্থাপন করা হয় তাকে অতাৎপর্যপূর্ণ অনগদ লেনদেন বা অর্থহীন অনগদ লেনদেন বলে। যেমন: অবচয়, অবলোপন, অবক্ষয়, স্থায়ী সম্পদ বিক্রয়জনিত ক্ষতি ইত্যাদি।

➽ অনাদায়ী পাওনা আদায়: যে পাওনা টাকা অনাদায়ী হয়ে গিয়েছিল তা ঘটনাক্রমে আদায় করা সম্ভব হলে তাকে অনাদায়ী পাওনা আদায় বলে। এর ফলে কারবারের পূর্বে হৃাসকৃত অনাদায়ী পাওনা প্রভিশন বৃদ্ধি পাবে এবং নগদ এর আগমন ঘটবে।

➽ অনাদায়ী পাওনা: চূড়ান্ত চেষ্টার পরও দেনাদারের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব না হলে যে ক্ষতি হয় তাকে অনাদায়ী পাওনা বা কু ঋণ বলে। এটি কারবারের একটি ব্যয় বা ক্ষতি।

➽ অফিস সরঞ্জাম: অফিসে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি যেমন – কম্পিউটার💻, টিভি📺, ফ্রিজ🍱, ফ্যান🔄 ইত্যাদি অফিস সরঞ্জাম বলে পরিচিত। এগুলো কারবারের অচলতি সম্পদ বা স্থায়ী সম্পদ বলে গণ্য হয়।

➽ অবক্ষয়/নি:শেষ করণ: এটিও অবচয়ের মতো তবে, প্রাকৃতিক সম্পদ বা ক্ষয়িষ্ণু সম্পদের যে অংশটি ভোগ বা উত্তোলন করা হয়েছে তার মূল্যকে অবক্ষয় বলে। কয়লা, গ্যাস, সোনা ইত্যাদির খনি, প্রাকৃতিক বন ইত্যাদি এর উপর অবক্ষয় ধরা হয়।

➽ অবচয়: সম্পদের ব্যবহারযোগ্য অংশের ব্যয়কে তার আয়ুষ্কালের মধ্যে বণ্টন করার যৌক্তিক প্রক্রিয়াকে অবচয় বলা হয়। সাধারণ দৃষ্টিতে- ব্যবহারজনিত ও সময়ের প্রবাহে অথবা অন্য কোন কারণে স্থায়ী সম্পত্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। এই ক্ষয়প্রাপ্তির আর্থিক পরিমাপকে অবচয় বলে।

➽ অবলেখকের দস্তুরি: যেসব সংস্থা বা ব্যক্তিবর্গ কোন নতুন কোম্পানির ইস্যুকৃত শেয়ার বা ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে একটি ন্যূনতম পুঁজি সংগ্রহের নিশ্চয়তা উক্ত নতুন কোম্পানিকে দিয়ে থাকে তাদের অবলেখক বলে। আর অবলেখকগণ তার নিশ্চয়তার বিনিময়ে কোম্পানি থেকে যে অর্থ নিয়ে থাকে তাকে অবলেখকের দস্তুরি বলে। এর আরেক নাম দায় গ্রাহকের কমিশন/ শেয়ার দালালের দস্তুরি।

➽ অবলোপন: অবলোপন অবচয়ের মতোই তবে, অস্পর্শনীয় সম্পদের ক্ষেত্রে অবলোপন শব্দটি ব্যবহার হয়। অর্থাৎ অদৃশ্য সম্পত্তির মূল্য হ্রাসকে অবলোপন বলে। যেমন সুনামের অবলোপন।

➽ অভিকর, শুল্ক, ও প্রবেশকর: কর সরকারি রাজস্বের একটি প্রধান উৎস। অভিকর স্থানীয় সরকার কর্তৃক আরোপিত হয়। শাব্দিক অর্থে অভিকর হলো পৌরসভা কর্তৃক আরোপিত কর। শুল্ক ধার্য করা হয় দ্রব্য বা সেবার ওপর, এবং প্রবেশকর কোনও দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য প্রদেয় কর।

➽ অলিখিত ক্রয় বা বিক্রয়: যে ক্রয় বা বিক্রয় হিসাবের খাতায় লেখা হয়নি বা হিসাব থেকে বাদ পড়ে গেছে তাকে অলিখিত ক্রয় বা অলিখিত বিক্রয় বলে। অলিখিত বিক্রয়কে সাধারণত বাকিতে বিক্রয় মনে করে হিসাবভুক্ত করার জন্য বিক্রয় হিসাবের সাথে যোগ এবং প্রাপ্য হিসাবের সাথে যোগ করা হয়।

➽ আইন খরচ: থানা/মামলা/ আদালত/ উকিল ইত্যাদির জন্যে যে খরচ হয় তাই আইন খরচ।

➽ আপ্যায়ন খরচ: কারবারের গ্রাহক বা অতিথিদের চা🍵, নাস্তা🍔, ঠাণ্ডা🍹, কফি☕ ইত্যাদির পরিবেশনের জন্যে যে খরচ হয় তাকে আপ্যায়ন খরচ বলে।

➽ আবগারি শুল্ক: দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত দ্রব্যের উপর যে কর ধার্য করা হয় তাকে আবগারি শুল্ক বা excise duties বলে। আবগারি শুল্ক আরও ব্যাপক অর্থ বহন করে। প্রশ্নোত্তর পর্বে এ নিয়ে আলোচনা থাকবে।

➽ আবর্তক খরচ: আবর্তক খরচের সমার্থক শব্দ হল চলমান বা চলতি খরচ।তাহলে চলতি খরচ কি? যে সকল খরচের প্রভাব সাধারণত একটি হিসাব কালের মধ্যে ব্যাপৃত থাকে বা যে খরচের মেয়াদ সাধারণত এক বছর তাই চলতি খরচ বা আবর্তক খরচ। সাধারণ ভাবে বলা যায় চলতি হিসাব বর্ষে ব্যবসায় পরিচালনা করতে যে সকল খরচ প্রতিষ্ঠান বহন করে তাই আবর্তক বা চলমান খরচ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পরিবহন ও যাতায়াত খরচ, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ, ডিপ্রিসিয়েসন বা অপচয় খরচ, মেরামত খরচ এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ খরচ, এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়, চলতি বছরের বেতন খরচ ইত্যাদি।


মোঃ অনিক শিকদার
বিবিএ অনার্স (হিসাববিজ্ঞান)
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Comment